সতউইক-চিরাগের প্রত্যাবর্তন: খেলার প্রকৃত সৌন্দর্য
কেন আমরা খেলা দেখি? শুধু ফলাফলের জন্য? শুধুই জয়-পরাজয়? নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু? সেই নিরলস পরিশ্রম, হাল না ছাড়া মনোভাব, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই—এসবই তো খেলার আসল সৌন্দর্য নয় কি?
ঠিক দুই সপ্তাহ আগে আমি কথা বলেছিলাম ভারতের ডাবলস ব্যাডমিন্টনের তারকা জুটি চিরাগ শেট্টি এবং সতউইকসাইরাজ রাঙ্কিরেড্ডির সঙ্গে। তখন তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আবার কোর্টে ফেরার। চিরাগ খুব সতর্ক ছিলেন, তিনি নির্দিষ্ট করে ফেরার দিন জানাতে চাননি, তবে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত করেছিলেন যে তারা সিঙ্গাপুর ওপেনে অংশ নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেছিলেন, “আমরা চাই ইনজুরি মুক্ত থাকতে। যদি কিছুদিন ইনজুরি ছাড়াই খেলতে পারি, তবে আমরা জানি আমাদের কী সামর্থ্য রয়েছে।” সঙ্গে এটাও যোগ করেছিলেন, “অলিম্পিকের আগুন এখনও আমাদের মধ্যে জ্বলছে, সেই স্বপ্ন আমরা কখনো ছাড়ব না। সেটা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শান্ত হব না।”
এ নিয়ে কোনো ভুল নেই—তারা এই মুহূর্তে ভারতের সেরা ডাবলস জুটি। এই বছরের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের মাঝে সিঙ্গাপুর ওপেনে সতউইক ও চিরাগের প্রত্যাবর্তন ভারতীয় ব্যাডমিন্টনকে নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। বিশেষ করে গোহ এবং ইজজুদ্দিনের বিপক্ষে তাদের খেলা ছিল নজরকাড়া। এই জুটি বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর এবং দুর্দান্ত ফর্মে আছে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া ওপেনে তারা সতউইক-চিরাগকে হারিয়েছিল। কিন্তু এবার সিঙ্গাপুরে, প্রথম গেমে যখন স্কোর ছিল ১৬-১৫, তখন থেকেই ভারতীয় জুটি নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বৃহস্পতিবার ৭৫ মিনিটের দীর্ঘ ম্যাচ খেলার পরও তাদের ফিটনেস ও স্ট্যামিনা দেখে সত্যিই অনুপ্রাণিত হতে হয়। যারা নিয়মিত ব্যাডমিন্টন দেখেন, তারা জানেন এই টুর্নামেন্টে ড্রটা ছিল বেশ কঠিন। তাদের ড্র-এর অর্ধেকেই ছিল ছয়টি মালয়েশিয়ান জুটি। কিন্তু এটাই তো খেলাধুলার প্রকৃত রূপ—প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
ম্যাচের প্রথম গেম ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। স্কোর যখন ১৬-১৫, তখনো ভারতীয় জুটি শান্ত। চিরাগ বারবার সতউইকের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন সার্ভ দেওয়ার আগে। হতে পারে ওটা ছিল মানসিক খেলা, হতে পারে কৌশলগত আলাপ। তবে এমন চাপের মুহূর্তেও ধৈর্য ধরে খেলা তাদের মানসিক দৃঢ়তারই পরিচয়। তারা আবারও প্রমাণ করলেন কেন তারা বিশ্বের অন্যতম সেরা ডাবলস জুটি।
