1 জুন 2025

থাই ভাষায় ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’: বঙ্গবন্ধুকে জানার নতুন জানালা

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবার প্রকাশিত হলো থাই ভাষায়। থাইল্যান্ডের প্রখ্যাত চুলালংকর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া স্টাডি সেন্টার এবং বাংলাদেশ দূতাবাস, ব্যাংককের যৌথ উদ্যোগে এই অনুবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির অংশ হিসেবেই এই আয়োজন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) -এর ট্রাস্টি এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নারিন হিরানসুথিকুল ও থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আব্দুল হাই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক নারিন বলেন, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ শুধুই কোনো ব্যক্তির স্মৃতিচারণ নয়, এটি একটি জাতির জন্মের ইতিহাস, যেটি লিখেছেন সেই ব্যক্তি নিজেই যিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়, যা উপস্থিত দর্শকদের আবেগে আলোড়িত করে। এরপর থাই অনুবাদ দলের প্রধান, চুলালংকর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. জিরায়ুধ সিনথুফান বলেন, এই অনুবাদ কেবল শব্দের অনুবাদ নয়, বরং এটি বঙ্গবন্ধুর চেতনা, অনুভূতি ও আদর্শের অনুবাদ।

পরে একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয় যেখানে অংশ নেন ইংরেজি অনুবাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফখরুল আলম এবং চুলালংকর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. সুরথ হরা সাইকুল। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, জীবনচেতনা ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাঁর নেতৃত্বের তাৎপর্য তুলে ধরেন। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন যে থাই অনুবাদটি স্থানীয় পাঠকদের কাছে বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে সহায়ক হবে।

গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মূল অংশ সম্পন্ন হয়। রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অন্যান্য অতিথিরা একসঙ্গে এই মহামূল্য গ্রন্থটির থাই সংস্করণ উন্মোচন করেন।

এই উপলক্ষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একটি ভিডিও বার্তায় জানান, বঙ্গবন্ধুর শান্তির বার্তা—“সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়”—এখনও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি। তিনি থাই সংস্করণ প্রকাশকে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন এবং আয়োজকদের প্রশংসা করেন।

রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন ছিলো দেশের মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। তাঁকে না জানলে বাংলাদেশকে বোঝা অসম্ভব। এই বইয়ের অনুবাদ থাই তরুণ প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে জানার অনুপ্রেরণা দেবে। তিনি আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

এই উদ্যোগে একটি বার্তা স্পষ্ট—ভাষার সীমা পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন, আদর্শ ও বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাস আজ বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে, আর থাই সংস্করণ তারই আরেকটি উজ্জ্বল নিদর্শন।