31 জুলাই 2025

বাংলাদেশের গর্ব: জিআই পণ্য ও তাদের তাৎপর্য

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া, মাটি, পানি এবং সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত যেসব পণ্য, সেগুলোকে ‘ভৌগোলিক নির্দেশক’ বা জিআই (Geographical Indication) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই পণ্যগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে যা শুধুমাত্র সেই নির্দিষ্ট এলাকায় উৎপন্ন হওয়ায় সম্ভব হয়। সম্প্রতি বাগদা চিংড়ি দেশের দশম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

জিআই চিহ্ন কী?

জিআই বা ভৌগোলিক নির্দেশক এমন একটি সনদ বা চিহ্ন যা কোনো পণ্যের নির্দিষ্ট এলাকার সঙ্গে সম্পর্কিত খ্যাতি, গুণমান বা বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে। সাধারণত এই চিহ্নে অঞ্চল, জেলা বা দেশের নাম উল্লেখ থাকে। বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থা WIPO এই সনদ প্রদান করে।

জিআই সনদের প্রয়োজনীয়তা

জিআই সনদ পেলে সংশ্লিষ্ট পণ্যের মান ও পরিচিতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সেই পণ্যের একটি ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করে এবং উৎপাদক অঞ্চলগুলোকে আইনি সুরক্ষা প্রদান করে। এর ফলে ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হয় এবং ঐতিহ্যবাহী পেশার উন্নয়ন ঘটে।

কেন ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতি দেওয়া হয়?

যখন কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের পণ্য তার গুণগত মান ও খ্যাতির জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিত হয়, তখন সেই পরিচিতিকে রক্ষা ও সুরক্ষার জন্য জিআই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকাই জামদানি শুধুমাত্র ঢাকার আবহাওয়া ও কারিগরদের মাধ্যমে তৈরি হয় বলে তা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।

বাংলাদেশের ১০টি জিআই পণ্য

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১০টি পণ্যের জন্য জিআই স্বীকৃতি অর্জন করেছে। প্রতিটি পণ্যই দেশের ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

  1. জামদানি (২০১৬)
    বাংলাদেশের প্রথম জিআই পণ্য। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন।

  2. ইলিশ মাছ (২০১৭)
    দেশের ঐতিহ্যবাহী মাছটি পেয়েছে দ্বিতীয় স্বীকৃতি। আবেদনকারী ছিল মৎস্য অধিদফতর।

  3. চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম (২০১৯)
    উচ্চ মানসম্পন্ন এই আমের স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

  4. নেত্রকোনার সাদা মাটি (২০২১)
    ব্যবহার হয় চিনামাটি তৈরিতে। আবেদন করে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসন।

  5. দিনাজপুরের কাটারীভোগ চাল (২০২১)
    ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি চাল। আবেদনকারী বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।

  6. কালিজিরা চাল (২০২১)
    এ চালও বিআরআরআই-এর উদ্যোগে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে।

  7. রংপুরের শতরঞ্জি (২০২১)
    দেশীয় হাতে তৈরি কার্পেট যা প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত।

  8. রাজশাহী সিল্ক (২০২১)
    রাজশাহীর প্রসিদ্ধ সিল্ক কাপড়। সনদ পেয়েছে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড।

  9. ঢাকাই মসলিন (২০২১)
    ইতিহাসখ্যাত মসলিন পুনরায় আবিষ্কার করে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এর স্বীকৃতি নিয়েছে।

  10. বাগদা চিংড়ি (২০২২)
    সর্বশেষ স্বীকৃতি পাওয়া পণ্য। আবেদন করেছিল বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতর।

জিআই পণ্যের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

জিআই সনদের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো এখন বিশ্ববাজারে নতুন করে পরিচিতি পাচ্ছে। এগুলোর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা যেমন বাড়ছে, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রক্ষা পাচ্ছে জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।

এই পণ্যগুলোকে ব্র্যান্ডিং, গবেষণা ও রফতানির দিক থেকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।