যুক্তরাষ্ট্রে ঔষধ প্রত্যাহার এবং গ্লেনমার্কের আর্থিক চাপ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা (USFDA) জানিয়েছে, উৎপাদনগত ত্রুটির কারণে ভারতের তিনটি বড় ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান—গ্লেনমার্ক, অ্যালেমবিক ফার্মা এবং সান ফার্মা—মার্কিন বাজার থেকে তাদের কিছু পণ্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটলো যখন কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম, গ্লেনমার্ক, একটি বড় আর্থিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
প্রত্যাহারের বিস্তারিত কারণ
ইউএসএফডিএ-এর সর্বশেষ এনফোর্সমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, মুম্বাই-ভিত্তিক গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস দুটি ভিন্ন ঔষধ বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কার্ভেডিলল ট্যাবলেট। সংস্থাটি জানিয়েছে, এই ট্যাবলেটের নির্দিষ্ট ব্যাচে ‘এন-নাইট্রোসো কার্ভেডিলল’ নামক একটি উপাদানের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এছাড়াও, ‘থিওফাইলিন’ নামক আরেকটি ট্যাবলেটের গুণগত মান পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় সেটিরও ২২ হাজারের বেশি বোতল বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, অ্যালেমবিক ফার্মাসিউটিক্যালস তাদের ইনসোমনিয়া বা ঘুমের সমস্যার ঔষধ ‘ডক্সেপিন হাইড্রোক্লোরাইড’ ক্যাপসুলের প্রায় ৯,৫০০ বোতল প্রত্যাহার করছে। এক্ষেত্রেও নাইট্রোস্যামিন নামক একটি ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
একইভাবে, সান ফার্মাসিউটিক্যালস উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘স্পিরোনোল্যাকটন’ ট্যাবলেটের ১১ হাজারের বেশি বোতল বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ঔষধটির মধ্যে посто сторонней примеси বা অ্যালুমিনিয়ামের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
ইউএসএফডিএ জানিয়েছে যে এই সবগুলো প্রত্যাহারই ‘ক্লাস-২’ ক্যাটাগরির, যার অর্থ হলো এই ঔষধগুলো ব্যবহারে সাময়িক স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, তবে গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।
গ্লেনমার্কের আর্থিক ফলাফল ও ব্যবসায়িক মন্দা
ঔষধ প্রত্যাহারের এই খবরের পাশাপাশি গ্লেনমার্কের আর্থিক অবস্থাও বেশ দুর্বল বলে জানা গেছে। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) কোম্পানির নীট মুনাফা প্রায় ৮৬.২% কমে মাত্র ৪৬.৮ কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩৪০.২ কোটি রুপি।
কোম্পানির মোট রাজস্ব সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৩,২৬৪ কোটি রুপি হলেও, পরিচালন মুনাফা (EBITDA) ১.৪% কমে ৫৮০ কোটি রুপিতে নেমে এসেছে। এর ফলে কোম্পানির মুনাফার মার্জিনও ১৮.১% থেকে কমে ১৭.৭% হয়েছে, যা তাদের ব্যবসায়িক দুর্বলতাকে নির্দেশ করে।
বিভিন্ন বাজারে মিশ্র পারফরম্যান্স
আঞ্চলিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে গ্লেনমার্কের বিক্রি ৩.৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর আমেরিকার বাজারেও নতুন ইনজেক্টেবল পণ্য চালুর কারণে আয় প্রায় ৮.৯% বেড়েছে।
তবে, ইউরোপের বাজারে কোম্পানির আয় ৪% হ্রাস পেয়েছে। একইসাথে, রাশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং এশিয়ার মতো উদীয়মান বাজারগুলোতেও ব্যবসার প্রবৃদ্ধি প্রায় স্থবির রয়েছে, যা মাত্র ০.২%। কোম্পানিটি অবশ্য আশা করছে যে মুদ্রার বিনিময় হার স্থির থাকলে এই বাজারগুলোতে তারা দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নতুন পণ্য
এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও গ্লেনমার্ক তাদের নতুন পণ্য নিয়ে আশাবাদী। কোম্পানির নতুন নাকের স্প্রে ‘রাইলট্রিস’ বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে এবং ৪৫টিরও বেশি বাজারে এটি ইতিমধ্যেই বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও, ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘কিউইনহায়ো’ নামক ঔষধটি প্রায় ১৫টি দেশে বাজারজাত করার আবেদন করা হয়েছে। সম্প্রতি, কোম্পানিটি তাদের ব্রণ চিকিৎসার ঔষধ ‘উইনলেভি’ যুক্তরাজ্যে বাজারজাত করার অনুমোদন পেয়েছে এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশেও এটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।