টোকিওতে আলকারাজ, বেইজিংয়ে সিনার: এশিয়ান কোর্টে নতুন লড়াই

ইউএস ওপেনের ফাইনালে রোমাঞ্চকর এক লড়াইয়ের পর টেনিস বিশ্বের দুই শীর্ষ তারকা কার্লোস আলকারাজ এবং ইয়ানিক সিনার এবার এশিয়ান সুইংয়ে মাঠে নামছেন। তবে এবার তারা ভিন্ন ভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছেন, কিন্তু দুজনের মনোযোগই একে অপরের দিকে নিবদ্ধ। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা টেনিস বিশ্বে এক নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
টোকিওতে আলকারাজের নতুন চ্যালেঞ্জ
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর তারকা স্পেনের কার্লোস আলকারাজ (২২) এবার जापान ওপেনে অংশ নিচ্ছেন, যা টোকিওতে অনুষ্ঠিত একটি ATP 500 টুর্নামেন্ট। শীর্ষ বাছাই হিসেবে তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর আর্জেন্টিনার সেবাস্তিয়ান বায়েজের (বিশ্ব র্যাঙ্কিং ৪১) বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে নামবেন।
গত বছর বেইজিং ওপেনের ফাইনালে সিনারকে পরাজিত করলেও এবার আলকারাজ টোকিওকে বেছে নিয়েছেন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সিনারকে নিয়ে বলেন, “আমি জানি সিনার তার খেলায় পরিবর্তন আনবে। আমিও বেশ কয়েকবার তার কাছে হারার পর নিজের খেলায় পরিবর্তন এনেছি। পরেরবার যখন আমাদের দেখা হবে, সে অবশ্যই নতুন কিছু চেষ্টা করবে। আমাকে সেই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
আলকারাজ বর্তমানে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। ইউএস ওপেনের ফাইনালে তিনি সিনারকে ৬-২, ৩-৬, ৬-১, ৬-৪ গেমে হারিয়ে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেন এবং সিনারের বিপক্ষে মুখোমুখি লড়াইয়ে ১০-৫ ব্যবধানে এগিয়ে যান। এই বছর তিনি ৬২টি ম্যাচ জিতে ৭টি শিরোপা ঘরে তুলেছেন। টোকিও ওপেনের ইতিহাসে রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচের মতো কিংবদন্তিরা শিরোপা জিতেছেন। আলকারাজ তাদের পাশে নিজের নাম লেখাতে চান।
বেইজিংয়ে সিনারের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়
অন্যদিকে, ইতালির তারকা ইয়ানিক সিনার (২৪) চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ATP 500 টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছেন। গত বছর এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে তিনি আলকারাজের কাছে হেরেছিলেন। এবার মৌসুমের তৃতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে তিনি ক্রোয়েশিয়ার মারিন সিলিচের (বিশ্ব র্যাঙ্কিং ৯৭) বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবেন।
ইউএস ওপেনের ফাইনালের হার নিয়ে সিনার বলেন, “আমি সেই ফাইনাল ম্যাচটি অনেকবার দেখেছি এবং বিশ্লেষণ করেছি। আমি আমার খেলায় ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। হয়তো এখন কিছু ভুল হচ্ছে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি সবসময় সামনে এগোতে চাই।”
দুই তারকাই অক্টোবরে শাংহাই মাস্টার্স 1000 টুর্নামেন্টে অংশ নেবেন, যেখানে তাদের আবারও ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা নিয়ে টেনিসপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞের চোখে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জাররা
আলকারাজ ও সিনারের এই দ্বৈরথের মাঝে টেনিস বিশ্বের খ্যাতনামা কোচ প্যাট্রিক মৌরাতোগলু সেই পাঁচজন খেলোয়াড়ের নাম উল্লেখ করেছেন, যারা ভবিষ্যতে এই দুজনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। তার মতে, শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য একজন খেলোয়াড়ের শক্তিশালী ফোরহ্যান্ড, নিখুঁত ব্যাকহ্যান্ড, দুর্দান্ত সার্ভিস, অসাধারণ গতি এবং শক্তিশালী মানসিকতা থাকা প্রয়োজন।
মৌরাতোগলুর নির্বাচিত পাঁচজন হলেন:
-
বেন শেলটন: আমেরিকান এই তরুণের অবিশ্বাস্য সার্ভিস এবং ফোরহ্যান্ড রয়েছে। মৌরাতোগলুর মতে, শেলটন যদি তার মুভমেন্টকে আরও উন্নত করতে পারেন, তবে তিনি আলকারাজ ও সিনারের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠবেন।
-
জোয়াও ফনসেকা: ব্রাজিলিয়ান এই তরুণ খেলোয়াড়ের খেলায় তেমন কোনো দুর্বলতা নেই। তার শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড গেম এবং সার্ভিস তাকে ভবিষ্যতের বড় তারকা হিসেবে পরিচিত করেছে। তবে শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার জন্য তার আরও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
-
হলগার রুনে: ডেনমার্কের এই খেলোয়াড়ের মধ্যে জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং তার খেলার সকল দিকেই দক্ষতা আছে। তবে তার প্রধান সমস্যা হলো স্থিতিশীলতার অভাব। মৌরাতোগলু মনে করেন, রুনে যদি তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তবে তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবেন।
-
জ্যাক ড্রেপার: ব্রিটিশ এই খেলোয়াড় ইন্ডিয়ান ওয়েলস এবং মাদ্রিদের মতো টুর্নামেন্টে ভালো পারফর্ম করে নিজের উন্নতির প্রমাণ দিয়েছেন। তার ব্যাকহ্যান্ড এখন আর দুর্বলতা নয়, বরং শক্তির জায়গায় পরিণত হয়েছে।
-
ফেলিক্স অগার-আলিয়াসিম: কানাডার এই খেলোয়াড়ের সার্ভিস এবং ফোরহ্যান্ড দুর্দান্ত। মৌরাতোগলুর মতে, তাকে তার ব্যাকহ্যান্ডকে সত্যিকারের অস্ত্রে পরিণত করতে হবে, কারণ বর্তমান টেনিসে কোনো দুর্বলতা নিয়ে শীর্ষে থাকা প্রায় অসম্ভব।