19 নভেম্বর 2025

ক্রিকেটের দুই ভিন্ন চিত্র: অ্যাডিলেইডে রোমাঞ্চের অপেক্ষা আর রাজকোটে প্রোটিয়াদের সান্ত্বনার জয়

ক্রিকেট বিশ্বের নজর এখন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকে, যেখানে অ্যাডিলেইড ওভাল প্রস্তুত হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের জন্য। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এই ডামাডোলের মধ্যেই ভারতের রাজকোটে ঘটে গেল আরেকটি জমজমাট লড়াই, যেখানে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ‘এ’ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দল। মহাদেশের দুই প্রান্তে ক্রিকেটের এই দুই ভিন্ন চিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের প্রতিবেদন।

অ্যাডিলেইড ওভাল ও পুরনো হিসাব-নিকাশ

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় অ্যাডিলেইড ওভালের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে এই মাঠেই ইংল্যান্ডকে ধসিয়ে দিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছিল টাইগাররা। সেই সুখস্মৃতি আজও বাংলাদেশি সমর্থকদের মনে গেঁথে আছে। তবে সেই টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে হারের স্মৃতিটা মোটেও সুখকর নয়। ওই ম্যাচের নানা বিতর্ক পরবর্তী সময়ে দুই দেশের ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে যোগ করেছে ভিন্ন এক ঝাঁঝ। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হোক কিংবা বহুজাতিক টুর্নামেন্ট, ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ মানেই এখন বাড়তি উত্তেজনা আর স্নায়ুর লড়াই। বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় সেই স্মৃতিবিজড়িত অ্যাডিলেইডেই আবারও মুখোমুখি হচ্ছে দুই প্রতিবেশী দেশ। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম অ্যাডিলেইডে খেলতে নামছে বাংলাদেশ, তাই ইংল্যান্ড-বধের সেই ম্যাচ থেকে সাকিব আল হাসানরা নিশ্চিতভাবেই নতুন করে অনুপ্রেরণা খুঁজবেন।

পরিসংখ্যান বনাম মাঠের বাস্তবতা

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভারত ও বাংলাদেশের শক্তিমত্তার পার্থক্যটা বেশ স্পষ্ট। পরিসংখ্যানের পাতায় ভারত যোজন যোজন এগিয়ে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই দলের তিনবারের দেখায় প্রতিবারই শেষ হাসি হেসেছে ভারত। এই সংস্করণে খেলা ১১টি ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জিততে পেরেছে কেবল একটিতে। তবে পরিসংখ্যান সবসময় মাঠের আসল চিত্র তুলে ধরে না, আর টি-টোয়েন্টি হলো এমন এক খেলা যেখানে মুহূর্তের ভুলে পাল্টে যায় ম্যাচের ভাগ্য।

বাংলাদেশ দল অবশ্য নিজেদের প্রত্যাশার ফানুস খুব একটা ওড়াতে চাইছে না। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে নিজেদের ‘আন্ডারডগ’ মেনেই মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। অন্যদিকে, ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড় এবং তাদের টিম ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশকে মোটেও হালকাভাবে নিচ্ছেন না। প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে যথেষ্ট সমীহ করছেন তারা, কারণ অঘটনের শিকার হতে চায় না কোনো বড় দলই।

রাজকোটে রানের পাহাড় ও ভারত ‘এ’ দলের লড়াই

যখন মূল দল অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্যস্ত, তখন ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিপক্ষে আনঅফিসিয়াল ওয়ানডে সিরিজে ঘাম ঝরিয়েছে ভারত ‘এ’ দল। রাজকোটে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে সফরকারীরা উপহার দিয়েছে রান উৎসবের এক দুর্দান্ত প্রদর্শনী। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের দুই ওপেনার লুয়ান-ড্রে প্রিটোরিয়াস এবং রিভালডো মোনসামি ভারতীয় বোলারদের ওপর রীতিমতো ছড়ি ঘুরিয়েছেন।

এই দুই ওপেনারের ব্যাটে ভর করে উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ২৪৩ রান, যা ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে দেয়। প্রিটোরিয়াস খেলেন ১২৩ রানের এক অনবদ্য ইনিংস এবং মোনসামি করেন ১০৭ রান। ডেলানো পটগিটার ও ডিন ফরেস্টারের ঝড়ো ক্যামিওতে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩২৫ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় প্রোটিয়ারা।

ব্যাটিং ধস ও সিরিজের ফয়সালা

৩২৬ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা নড়বড়ে হলেও মাঝপথে লড়াই জমিয়ে তুলেছিলেন আয়ুষ বাদোনি এবং ইশান কিষান। পঞ্চম উইকেটে তাদের ৮৮ রানের জুটিতে ভারত ‘এ’ দল জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। বাদোনি ৬৬ এবং ইশান কিষান ৫৩ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস উপহার দেন। তবে এই দুই সেট ব্যাটার মাত্র ৫ ওভারের ব্যবধানে ফিরে গেলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ।

শেষ পর্যন্ত ২৫২ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত ‘এ’ দলের ইনিংস, ফলে ৭৩ রানের বড় ব্যবধানে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’। যদিও এই জয়ে সিরিজের ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আসেনি, কারণ আগের দুই ম্যাচ জিতে ভারত আগেই ২-১ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছিল। রাজকোটের এই ম্যাচটি তাই দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ছিল শুধুই সান্ত্বনার জয়, আর ভারতের জন্য ছিল বিশ্বকাপের ডামাডোলের মাঝে একটি সতর্কবার্তা।