ইউভেন্তুসকে হারিয়েও পিএসজির গ্রুপ সেরা হতে না পারার হতাশা
গ্রুপ সেরা হয়ে নকআউট পর্বে যেতে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না পিএসজির সামনে। ইতালির তুরিনে ইউভেন্তুসের কড়া চ্যালেঞ্জ সামলে তারা ২-১ গোলের জয়ও পেল। কিন্তু দিনশেষে ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের ঘিরে ধরল একরাশ হতাশা। কিলিয়ান এমবাপের গোলে সফরকারীরা এগিয়ে যাওয়ার পর প্রথমার্ধেই সমতা টানেন লিওনার্দো বোনুচ্চি। পরে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমেই দলের জয়সূচক গোলটি করেন নুনো মেন্দেস।
বেনফিকার নাটকীয়তায় পিএসজির স্বপ্নভঙ্গ
পিএসজির এই জয়ের রাতেই ঘটল মূল নাটক। একই সময়ে শুরু অন্য ম্যাচে, ইসরায়েলের ম্যাকাবি খাইফার মাঠে অবিশ্বাস্য ফুটবল উপহার দিল বেনফিকা। প্রথমার্ধে ১-১ গোলে সমতা থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে গোল উৎসবে মেতে ওঠে পর্তুগিজ ক্লাবটি। তারা ম্যাচটি জেতে ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে। এই জয়ের ফলে বেনফিকা ও পিএসজি—উভয় দলের পয়েন্ট (১৪), মুখোমুখি লড়াই (দুটি ম্যাচই ১-১) এবং গোল ব্যবধান (উভয় দলই ১৬ গোল করেছে ও ৭ গোল হজম করেছে) সমান হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত, গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষের মাঠে বেশি গোল করার সুবাদে পিএসজিকে টপকে গ্রুপ সেরা হয়ে যায় বেনফিকা।
এমবাপের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য
কার্ডের নিষেধাজ্ঞায় এই ম্যাচে নেইমার না থাকায় পিএসজির আক্রমণে কিছুটা ঘাটতি ছিল। তবে এমবাপের নৈপুণ্যেই দলটি ত্রয়োদশ মিনিটে প্রথম গোল পেয়ে যায়। লিওনেল মেসির পাস ধরে তিনি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে বল জালে জড়ান। এটি ছিল আসরে তার সপ্তম গোল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই পারফরম্যান্সের মতোই, রিয়াল মাদ্রিদে কিলিয়ান এমবাপের প্রথম মৌসুমটিও ছিল নানা চ্যালেঞ্জে ভরা, যা ধীরে ধীরে সফলতার মুখ দেখে।
এল ক্লাসিকোর দুঃস্বপ্ন ও ফ্লিকের ফাঁদ
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে প্রথম মৌসুমে ৪৪ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতলেও, এমবাপের শুরুর মাসগুলো সহজ ছিল না। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর বার্নাব্যুতে তার প্রথম এল ক্লাসিকো ছিল এক দুঃস্বপ্নের মতো। সেই ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ ০-৪ গোলে হেরে যায় এবং এমবাপে একাই অবিশ্বাস্যভাবে আটবার অফসাইডের ফাঁদে পড়েন। বার্সেলোনার কোচ হান্স ফ্লিকের হাই-লাইন ডিফেন্সিভ কৌশলের কাছে সেদিন পুরোপুরি পরাস্ত হন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড। অফসাইডের কারণে তার দুটি গোল বাতিলও হয়।
এমবাপের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন
তবে সেই ধাক্কা সামলে এমবাপে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পরবর্তী এল ক্লাসিকোগুলোতে তিনি বার্সেলোনার জালে পাঁচবার বল জড়ান: সুপারকোপা ফাইনালে একবার, কোপা দেল রে ফাইনালে একবার এবং লিগের ফিরতি ম্যাচে একটি দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক। চলতি মৌসুমেও তিনি অসামান্য ফর্মে আছেন। এই মৌসুমের ১২টি ম্যাচ খেলেই এর মধ্যেই ১৫টি গোল করে ফেলেছেন তিনি।
অফসাইড ত্রুটি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা
রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জাভি আলোনসো অবশ্য এমবাপের অফসাইড প্রবণতা নিয়ে চিন্তিত নন। তিনি বলেছেন, “তিনি মিলিমিটারের জন্য অফসাইড হচ্ছেন। এই ধরনের জিনিস অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নত করা যায়।” এবং এমবাপে উন্নতিও করছেন। এই মৌসুমে তার অফসাইড গড় গত মৌসুমের মতোই (ম্যাচ প্রতি ০.৯২) থাকলেও সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে তা কমে এসেছে। বার্সার মতোই হাই-লাইন ডিফেন্স ব্যবহার করা ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে তিনি একবারও অফসাইড হননি। বোঝাই যাচ্ছে, রবিবারের পরবর্তী এল ক্লাসিকোতে আবারও ফ্লিকের সেই ফাঁদ এড়াতে এমবাপে ভালোভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।