14 জুলাই 2025

২০২৫-এর শিক্ষা বিপ্লব: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব এবং অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ

AI বদলে দিচ্ছে শিক্ষার ধারা

২০২৫ সাল থেকে শিক্ষা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার বিশ্বব্যাপী ও ভারতের মতো দেশে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। স্কুল, কলেজ এবং অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্মে AI এখন শুধু সহায়ক নয়, বরং শেখা, শেখানো এবং ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিই আমূল বদলে দিচ্ছে। AI প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা এখন আরও ব্যক্তিকেন্দ্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ফলপ্রসূ হয়েছে, যদিও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তথ্য গোপনীয়তা এবং প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা থেকে অতিব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতির দিকে

এখনকার AI চালিত অ্যাডাপটিভ লার্নিং প্ল্যাটফর্ম যেমন খান একাডেমির ‘Khanmigo’ বা ভারতের BYJU’S ও Embibe — শিক্ষার্থীদের শেখার ধরন বুঝে সঙ্গে সঙ্গে পাঠের স্তর সামঞ্জস্য করে। যুক্তরাষ্ট্রের ALT-School ও Gooru Learning Platform এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে শেখার ফাঁক চিহ্নিত করে ব্যক্তিগত সহায়তা দেয়।

শিক্ষকের সহচর AI

শিক্ষকদের পক্ষে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা সহজতর হয়েছে AI ভিত্তিক অ্যাপ ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে। ভারতে Teachmint ও Scribetech শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি ও রিপোর্ট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের Century Tech প্ল্যাটফর্ম শিক্ষককে শিক্ষার্থীর পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত পদক্ষেপের পরামর্শ দেয় — যেন একটি ডিজিটাল সহকারী।

ভাষা ও প্রবেশাধিকারে সেতুবন্ধন

শিক্ষাকে সকলের জন্য সহজলভ্য করতে AI ভাষান্তর ও বক্তৃতা প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গুগলের ‘Read Along’ অ্যাপ গ্রামীণ অঞ্চলের শিশুদের মাতৃভাষায় পড়তে শেখার সুযোগ দিচ্ছে। Duolingo-এর AI টিউটর বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষকে নতুন ভাষা শেখাচ্ছে। এমনকি জাপান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্কুলে বহুভাষী শিক্ষার্থীদের সহায়তায় রিয়েলটাইম অনুবাদক AI ব্যবহার হচ্ছে। কর্ণাটকে মাইক্রোসফটের AI টেক্সট-টু-স্পিচ প্রযুক্তি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কণ্ঠে কনটেন্ট পৌঁছে দিচ্ছে।

শিক্ষার টেকসই ভবিষ্যৎ হুমকিতে

AI-ভিত্তিক এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মধ্যেও, শিক্ষা খাতে অর্থায়নের সংকট দিন দিন বাড়ছে। UNESCO প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শিক্ষা সহায়তা ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে এক চতুর্থাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে — যার মধ্যে ২০২৪ সালেই ১২% হ্রাস দেখা গেছে। অথচ গবেষণায় বলা হয়েছে, শিক্ষায় প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগ জাতীয় অর্থনীতিতে ১৫–২০ ডলার প্রবৃদ্ধি আনে।

নিম্নআয়ভিত্তিক দেশগুলোতে এই সাহায্য গড়ে সরকারি শিক্ষা ব্যয়ের ১৭% পর্যন্ত হয়ে থাকে, আবার কিছু দেশের ক্ষেত্রে তা জাতীয় বাজেটের অর্ধেক। তবুও ২৭২ মিলিয়ন শিশু ও তরুণ এখনো বিদ্যালয়ের বাইরে, যার অর্ধেকই আফ্রিকায়।

ঋণে ডুবে থাকা দেশে বিনিয়োগের ঘাটতি

UNESCO জানিয়েছে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগে ঘাটতি অনেকাংশে দেশের অতিরিক্ত ঋণভার থেকেই তৈরি হয়েছে। ২০২২ সালে আফ্রিকায় সরকারগুলো শিক্ষা বাজেটের সমান পরিমাণ অর্থ ঋণ পরিশোধেই ব্যয় করেছে। বর্তমানে ৬০% নিম্নআয় দেশ ঋণসঙ্কটে বা এর ঝুঁকিতে রয়েছে।

UNESCO-র সতর্কবার্তা ও আহ্বান

এই সংকট কাটিয়ে উঠতে UNESCO সেভিলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একটি যৌথ ঘোষণায় শিক্ষাকে উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দাতাদের নতুন করে প্রতিশ্রুতি প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান — এই তিনটি খাতে টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতিও ব্যাহত হবে বলে সংস্থাটি সতর্ক করেছে।

উপসংহার: প্রযুক্তি ও অর্থের ভারসাম্যে ভবিষ্যতের শিক্ষা

একদিকে যখন AI নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিক সংকট শিক্ষার ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। এই দুই চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে মোকাবেলা করেই ২০২৫ এবং তার পরবর্তী সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য দরকার রাষ্ট্র, প্রযুক্তি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক দাতাদের সমন্বিত উদ্যোগ।